স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-বিডা’র যৌথ আয়োজন “শোকেস বাংলাদেশ ২০২১: বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য ইনভেস্টমেন্ট সামিট”-এ বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্যের সরকারি-বেসরকারি খাতের নেতৃবৃন্দ সম্প্রতি অংশগ্রহণ করেন। দুই দেশের বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসমূহের বেশ কিছু প্রস্তাবনা নিয়ে সামিটে আলোচনা করা হয়।
সামিটে বক্তারা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতার বিষয়টি আলোকপাত করেন এবং সেইসাথে ভবিষ্যতে এদেশের টেকসই প্রবৃদ্ধির ব্যপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তাদের মতে একটি দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের অবকাঠামো, শিল্প, কৃষি, নগরায়ণ, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি প্রশমন এবং টেকসইতাকে সংযুক্ত করে প্রতিটি ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব। তারা আশাবাদী, এফডিআই এবং আন্তর্জাতিক প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এই টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনার অর্জনকে ব্যাপকভাবে ত্বরান্বিত করবে। এছাড়া যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি হিসেবে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততার বিষয়টি তুলে ধরেন বক্তারা।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-বিডা’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সামিটটি ৪ নভেম্বর, লন্ডন-এ অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাজ্যের সরকারি-বেসরকারি খাতের উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি, নীতিনির্ধারক, বিনিয়োগকারী, ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের বেসরকারি-সরকারি খাতের বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বেসরকারি খাতের শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান; গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি; বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান মো: সিরাজুল ইসলাম; বাংলাদেশে অবস্থানরত বৃটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারসন ডিকসন; যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড এবং লাইবেরিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম; এবং এফবিসিসিআই-এর সভাপতি মো: জসিম উদ্দিন উক্ত আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়া উক্ত সামিটে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয়; যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ-এ অবস্থিত স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-এর সিইও টরি বার্ন্টসেন; এমসিসিআই-এর সভাপতি নিহাদ কবির; এফআইসিসিআই-এর সভাপতি রূপালী চৌধুরী; অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এমসিসিআই-এর পরিচালনা বোর্ডের সদস্য নাসিম মঞ্জুর; বিডা’র নির্বাহী সদস্য মহসিনা ইয়াসমিন; ব্যারিস্টার তানজীব-উল-আলম, এলএলবি (লন্ডন); হেড অব চেম্বার তানজীব আলম ও অন্যান্য প্রতিনিধবৃন্দ; এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ-এর সিসিআইবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হেড অভ ক্লাইন্ট কভারেজ এনামুল হক বক্তৃতা রাখেন।
উক্ত সামিটে পিডব্লিউসি ইউনাইটেড কিংডম-এর লিডার অব ইন্ডাস্ট্রি ফর ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস মিস ইসাবেল জেনকিন্স এবং ইউনিলিভার ইউকে-এর ডিরেক্টর, এমএন্ডএ, মিঃ গেভিন ডান, বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সম্ভাব্য গন্তব্য কেন এবং বিনিয়োগ প্রক্রিয়াকে সমর্থন করার জন্য কী করা যেতে পারে সে বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ব্যবসার ১০০ টিরও বেশি প্রতিনিধিও সামিটে অংশগ্রহণ করেন।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয় বলেন, “গৌরবের ৫০ বছর উদযাপন করছে বাংলাদেশ। আর তাই ২০২১ সালটি এই দেশটির জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার পরবর্তী ৩৬ বছরের তুলনায় গত ১২ বছরে বাংলাদেশের নমিনাল জিডিপি বৃদ্ধির হার তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একারণে বাংলাদেশ এই সময়ের মধ্যে টেকসই অগ্রগতির মুখ দেখেছে। মহামারির কারণে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও দেশটি বিশ্বের সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার অর্জন করেছে। আর এক্ষেত্রে সরকারের ন্যায়বিচারপূর্ণ নীতি এবং জনগণের সহনশীলতার আসলেই কৃতজ্ঞতা পাওয়ার যোগ্য। আশাকরা যাচ্ছে যে, দেশটি আগামীতেও প্রবৃদ্ধির গতিপথ বজায় রাখবে যা এর জিডিপিকে মালয়েশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, ডেনমার্ক এবং অন্যান্য দেশের অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হবে। আমার মতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের এখনি সঠিক সময়।”
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সালমান ফজলুর রহমান বলেন, “গত এক দশকে বাংলাদেশ যে টেকসই ও বিস্তর প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে তা আকস্মিক ভাবে ঘটেনি, বরং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতার জন্য এটি অর্জিত হয়েছে। এজন্যে তাঁকে আমি ধন্যবাদ জানাই। এখন মধ্যম আয়ের দেশের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ-আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার জন্য, আমাদের দেশীয় বাজারের বিকাশ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি রপ্তানি সেক্টরে বৈচিত্র্য আনতে হবে – উল্লেখিত বিষয় দুটিই এফডিআই এবং দেশীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।”
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার ১২ বছর পর, আমরা একটি জাতি হিসাবে বড় মাইলফলক অর্জন করেছি এবং মধ্যম আয়ের মর্যাদা লাভ করেছি। এই অবিশ্বাস্য যাত্রায় আইসিটি বিভাগ বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে এবং আগামীতে এই টেকসই অগ্রগতির মূল সহায়ক হয়ে কাজ করে যাবে।”
জনাব মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, নির্বাহী চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কতৃপক্ষ (বিডা) বলেন, “বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর বিনিয়োগকারী হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যের এদেশে বিনিয়োগের আরও অনেক সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের উদার বিনিয়োগ নীতি এবং বিশেষ সুবিধাসমূহ বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে। অগ্রগতির শক্তিশালী সহযোগী যুক্তরাজ্য থেকে আরো বিনিয়োগ অর্জনে আমরা পূর্ণ সহযোগিতা প্রদানে প্রস্তুত।”
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড এবং বিডা ২০২১-এর জানুয়ারি-তে একটি পার্টনারশীপ গঠন করে যেখানে বাংলাদেশকে বিনিয়োগের একটি সম্ভাবনাময় গন্তব্য হিসেবে বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ দেশে আনতে প্রতিষ্ঠান দুটি যৌথভাবে কাজ করেছে। এই অংশীদারিত্বের অধীনে এটিই প্রথম স্বশরীরে বিনিয়োগ-কেন্দ্রিক রোডশো, যা বছরব্যাপী অনুষ্ঠিত চীনা, মালয়েশিয়ান এবং জাপানি বিনিয়োগকারীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারের অনুগামী।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগকারী অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ আনার লক্ষ্যে এর আগেও নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যাংকটি হংকং, সিঙ্গাপুর এবং লন্ডন-এ বিডা সহ তাদের অন্যান্য প্রধান পার্টনারদের সাথে নিয়ে এই পর্যন্ত ৬ টি ইনভেস্টমেন্ট সামিটের আয়োজন করেছে।
দীর্ঘ ১১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকই দেশের একমাত্র বহুজাতিক ব্যাংক, যার রয়েছে বাংলাদেশে দৃঢ় স্থানীয় উপস্থিতি এবং এর বৈশ্বিক পরিধি ও পণ্য কাজে লাগানোর সক্ষমতার অনন্য এক সংমিশ্রণ। বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের একজন হিসেবে ব্যাংকটি নিজেই দেশে বিদেশী বিনিয়োগ নিয়ে আসা এবং বিদেশী বিনিয়োগকে সহজ করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য লেনদেনের মধ্যে বাংলাদেশের একক বৃহত্তম বিদেশী বেসরকারি বিনিয়োগ লেনদেন, যা বাংলাদেশের জন্য এ যাবৎকালের একক বৃহত্তম ভোক্তা খাত অধিগ্রহণ ছিল তার এক্সক্লুসিভ ফাইন্যান্সিয়্যাল অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করেছে এই ব্যাংক। ২০১৮ সালে ব্যাংকটি ঢাকা স্টক এক্সেঞ্জে যেকোন বিদেশী স্টক একচেঞ্জের জন্য প্রথমবারের মতো সম-অংশগ্রহণ সুবিধা চালু করে।