প্রযুক্তি উদ্ভাবনে নারীদের অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত করার লক্ষ্যে নারীদের জন্য অনুষ্ঠিত হলো প্রযুক্তি-ভিত্তিক প্রতিযোগিতা ‘ডিজিটাল ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ ফর উইমেন ২০২৩’-এর চতুর্থ আসর। শনিবার (২০ মে) বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি)-এর মিলনায়তনে এই প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বব্যাংক ও ইউএনডিপি বাংলাদেশ এক্সেলেরেটর ল্যাব সহযোগিতায় প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করেছে উইমেন ইন ডিজিটাল। মিডিয়া পার্টনার দ্য ডেইলি স্টার। আরও সহযোগিতায় ছিল আইইইই উইমেন উইন্স ও সুমাইয়া টেকনোলজিস লিমিটেড। অনুষ্ঠানের শুরুতে ছিল প্রতিযোগিতায় ফাইনাল রাউন্ডের অংশগ্রহণকারী ৮ টিমের গ্রুপ প্রেজেন্টশন। এতে পর্যায়ক্রমে অংশগ্রহণ করে প্রজেক্ট এলিসা, টিম ক্লাইমেট অ্যাভেঞ্জার্স, টিম বায়ো গ্রীন, টিম ভিশনারীজ, টিম সানশাইন, টিম লুমেনিসিনস, টিম গ্র্যান্ডে ও টিম টার্মিনেটরসের সদস্যরা। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে প্যানেল আলোচনা সভা। ‘ডিজিটাল স্কিলস ফর লাইফ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন ইউএনডিপি বাংলাদেশ এক্সেলেরেটর ল্যাবের প্রধান এম এম জিমরান খান। এতে আলোচক হিসেবে ছিলেন বিশ্বব্যাংকের ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট সুপর্না রায়, সিনিয়র সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট সাবা মোয়েম, বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ)-এর প্রেসিডেন্ট নাজনীন নাহার, ব্যাবিলন রিসোর্সেস লিমিটেডের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার অ্যান্ড কো-ফাউন্ডার লিয়াকত হোসেন, সুমাইয়া টেকনোলজিস লিমিটেডের চেয়ারম্যান অ্যান্ড কো-ফাউন্ডার রিপা আর জাহান। তৃতীয় পর্বে শুরু হয় গ্র্যান্ড ফিনালের সমাপনী অনুষ্ঠান। উইমেন ইন ডিজিটালের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের পাটোয়ারির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। স্বাগত বক্তব্য দেন উইমেন ইন ডিজিটালের ফাউন্ডার অ্যান্ড চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার আছিয়া খালেদা নীলা।
অনুষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে বক্তব্য দেন দ্য ন্যাশনাল উইমেন হ্যাকাথন ২০১৭-এর বিজয়ী শামসুন নাহার লিপি। প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে বক্তব্য দেন সিটি ইউনিভার্সিটির সিএসই ডিপার্টমেন্টের হেড শেফায়েত হোসেন, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ, ইউএনডিপি বাংলাদেশের ডেপুটি রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ ভ্যান নগুয়েন, বিশ্বব্যাংকের ভুটান ও বাংলাদেশস্থ কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদেললাহি সেকসহ প্রমুখেরা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে ২০১০ সাল থেকে সারাদেশে নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে স্বালম্বী করতে প্রত্যেকটা ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি শুরু করেন। এরপর নারীদের তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে সেগুলি বাস্তবায়ন করেছেন। এর ফলে আমাদের মাঝে অনেক সফল নারী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছেন। সারাদেশে অসংখ্য নারীরা এখন নিজে স্বালম্বী হয়েছেন এবং পরিবরাকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করছেন। কয়েকটি পর্যায়ে সারাদেশের স্মার্ট নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। আগামী আরও ২৫ হাজার নারীকে একইভাবে প্রণোদনা দেয়া হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে ৫১ শতাংশ নারী। এই নারীদের রেখে স্মার্ট বাংলাদেশে গড়ে তোলা সম্ভব না। ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে আমাদের নারীদেরও স্মার্ট সিটিজেন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্বব্যাংকের ভুটান ও বাংলাদেশস্থ কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদেললাহি বলেন, নারীদের তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলতে এমন সুন্দর প্রতিযোগিতা আয়োজন করার জন্য উইমেন ইন ডিজিটালকে ধন্যবাদ। তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে যাচ্ছে। সরকারের সাথে বিশ্ব ব্যাংকও নারীদের তথ্যপ্রযুক্তি দক্ষ করে তুলতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে আগ্রহী। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে নারীদের বাদ দিয়ে এটা বাস্তবায়ন সম্ভব না।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের ডেপুটি রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ ভ্যান নগুয়েন বলেন, সময়ের পরির্তনের সাথে সাথে বাংলাদেশের নারীরা তথ্যপ্রযুক্তিতে সম্পৃক্ত হচ্ছে। আগের তুলনায় নারীরা আইটিতে পড়াশোনা করছে। উদ্যোক্তা হচ্ছে। চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছে। সরকারের পক্ষ থেকেও নানা ভাবে তাদের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এখন তাদের এগিয়ে যাওয়ার সময়। নারীরা এই সুযোগগুলি যদি ভাল মতো ব্যবহার করে এগিয়ে যেতে পারে তাহলে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। উইমেন ইন ডিজিটালের প্রধান নির্বাহী পরিচালক আছিয়া নীলা বলেন, উইমেন ডিজিটাল টেকনোলজি কোম্পানি হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবছর এ ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করে, যাতে টেকনোলজিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো যায়। এখনো ডিজিটাল টেকনোলজিতে নারীরা অনেক পিছিয়ে আছে। তাঁদেরকে টেকনোলজিতে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করার জন্য কিছুটা সাহস জোগাতে আমাদের এই আয়োজন। আমরা সারাদেশ থেকে প্রযুক্তিতে কাজ করতে আগ্রহী এমন নারীদের ঢাকা এনে প্রপার মেন্টরিংয়ের মাধ্যমে তাঁদেরকে ডিজিটাল টেকনোলজি বিষয়ে দক্ষ করে তুলতে চেষ্টা করি। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ‘ডিজিটাল: ইনোভেশন অ্যান্ড টেকনোলজি জেন্ডার ফর ইকুয়ালিটি’ শিরোনামের এই প্রতিযোগিতার শুরু হয়। বিজ্ঞ বিচারক প্যানেলের সদস্যরা প্রাথমিকভাবে ১৩২টি প্রজেক্ট থেকে ৫৮টি প্রজেক্টকে প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচন করেন। কয়েকটি পর্বে যাচাই-বাছাইয়ের পর সেরা আটটি প্রজেক্টকে চূড়ান্ত পর্বের জন্য নির্বাচন করা হয়। প্
রতিযোগিতার বিচারক প্যানেলের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বুয়েটের প্রফেসর সিলিয়া শাহনাজ, সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের হেড অব রিসার্চ অ্যান্ড কমিউনিকেশন সৈয়দ মাহফিজ কামাল অনিক, আইসিটি ডিভিশনের বিগ-এর হেড অব অপারেশন অ্যান্ড কো-অর্ডিনেটর সিদ্ধার্থ গোস্বামী, ক্রিয়েটিভ কনসারভেশন অ্যালায়েন্সের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার অ্যান্ড কো-ফাউন্ডার শাহরিয়ার কেইসার রহমান ও ইউনাইটেড ন্যাশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম প্রজেক্ট অফিসার রেবেকা সুলতানা। প্রতিযোগীদের মেন্টর হিসেবে ছিলেন টেক জায়ান্ট কোম্পানি অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসের সল্যুশনস আর্কিটেক্ট লিডার অ্যান্ড আইটি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ মাহদী উজ জামান। পুরো প্রতিযোগিতায় মেন্টরস হিসেবে ছিলেন ডিভাইন আইটি লিমিটেটেডর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল আহমেদ ফখরুল হাসান, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্টাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)-এর মহাসচিব তৌহিদ হোসেন, ইউএক্স ম্যানেজার-রেডলাইম সলিউশনসের মো. আরাফাত হোসেন, সিটি ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের প্রধান সাফায়েত হোসেন, অ্যাক্টিভেশন: উই অটোমেট সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের প্রধান রায়হান এস রাজন, স্ট্রেইট-এর চিফ টেকনোলজি অফিসার অ্যান্ড কো-ফাউন্ডার জুবায়ের এল বিল্লাল খান, সর ভেঞ্চুরেস অ্যান্ড কন্সালটেন্সির ফাউন্ডার অ্যান্ড চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সায়মা রাহমান। প্রতিযোগিতায় ফাইনাল রাউন্ডের অংশগ্রহণকারী ৮ টিমের মধ্যে বিজয়ী হয়েছে তিনটি প্রজেক্ট। প্রথম হয়েছে প্রজেক্ট এলিসা, দ্বিতীয় হয়েছে টিম গ্র্যান্ডে, তৃতীয় হয়েছে টিম লুমেনিসিনস। প্রতিযোগিতায় সেরা পাঁচ বিজয়ী টিমকে অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসের সল্যুশনসের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে ৩ লাখ টাকা। প্রথম টিমকে পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয়েছে ৫০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় টিমকে ৩০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় ও চতুর্থ টিমকে ২০ হাজার টাকা।