আগামী ২১ ও ২২ জুন ২০২৫ তারিখ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের আয়োজনে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল’ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্ট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)-এর উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপে (Strategic Partnership) ৬ষ্ঠ বারের মতো রাজধানীর সেনাপ্রাঙ্গণ ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের বিপিও শিল্পের সর্ববৃহৎ শীর্ষ সম্মেলন বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০২৫। উক্ত সামিটের এবারের প্রতিপাদ্য “BPO 2.0: Revolution to Innovation”- যা নতুন সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ রূপান্তরের প্রতিচ্ছবি। এ উপলক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫ বেলা ৩:০০ টায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সভাকক্ষে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই বাক্কো কার্যনির্বাহী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুসনাদ-ই-আহমদ বিগত বিপিও সামিটসমূহের কার্যক্রম ও অর্জনের প্রতি আলোকপাত করেন। এরপর অনুষ্ঠিতব্য সামিটের সম্ভাব্য কার্যক্রম ও পরিকল্পনা সম্পর্কে সকলকে অবহিত করা হয় । সামিটে ৩০ টি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তি/বিপিও প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও এবং সেবা প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করার সুযোগ পাচ্ছে। তাই বলা যায়, এবারের সামিট হবে গ্রাহকসেবা ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক মিলনমেলা । তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক ৯টি সেমিনার ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে আইটিইএস ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তি খাতের খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞগণ অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন, যা সামিটকে বিশ্বমানের একটি প্ল্যাটফর্মে পরিণত করবে। ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং বিষয়ক কর্মশালাগুলোতে বিপিও শিল্পের সম্ভাবনাময় দিকগুলো শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরে এ খাতে আকর্ষণীয় ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে উৎসাহ যোগানো হবে। অন্যদিকে বরাবরের মত এবারেও চাকুরি মেলার মধ্য দিয়ে বিপিও শিল্পে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহীদের সিভি সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া যোগ্য প্রার্থীদের জন্য থাকবে নিয়োগেরও ব্যবস্থা। আউটসোর্সিং শিল্পের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ফ্রিল্যান্সারদের সমস্যা, সম্ভাবনা এবং সফলতার গল্প নিয়ে থাকছে বিভিন্ন সেমিনার । আইটিইএস তথা বিপিও শিল্পের উন্নয়নে পলিসি ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক সেমিনারে সরকার কর্তৃক প্রণীত বিভিন্ন আইন ও নীতিমালার সংশোধন নিয়ে আলোচনা করবেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞগণ, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং এই শিল্পের নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও, উক্ত সামিটে দেশে অবস্থিত বিভিন্ন দূতাবাস থেকে আগত সম্মানিত হাইকমিশনারগণ, এম্বাসেডরগণ, এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিগণ উপস্থিত থাকবেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, এনডিসি বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এ যুগে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সেবা খাত আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। বিপিও খাত আমাদের তরুণ সমাজের জন্য বিশাল কর্মসংস্থানের দ্বার উন্মোচন করছে, যেখানে দক্ষতা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার অপার সুযোগ রয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে আইটিইএস খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে এবং এ খাতের টেকসই উন্নয়নের জন্য নীতিমালা, অবকাঠামো ও মানবসম্পদ উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বিপিও সামিট বাংলাদেশের মতো আয়োজন এ খাতের বিকাশে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ, যা দেশি-বিদেশি অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে। আমি আশা করি, এবারের সামিটের মাধ্যমে আমরা কেবল নতুন প্রযুক্তি ও ধারণার সঙ্গে পরিচিত হবো না, বরং দেশের তরুণদের বিপিও খাতে সম্পৃক্ত করতে একটি কার্যকরী কর্মপরিকল্পনার দিকেও এগিয়ে যাবো।
সংবাদ সম্মেলনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার উদ্দিন বলেন, “আমাদের তরুণদের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প খাতের বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের জন্য তাদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। বিপিও সামিট একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম যেখান থেকে তরুণরা অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারে এবং এই শিল্পে ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে প্রয়োজনীয় গাইডলাইন পাবে। তরুণরা প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও উদ্যমের মাধ্যমে যে সাফল্য অর্জন করছে, তা দেশের অর্থনীতিরও শক্ত ভিত তৈরি করছে”।
উল্লেখ্য, বাক্কো কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি তানভীর ইব্রাহীম বলেন- “৪০০ এর অধিক সদস্য নিয়ে বাক্কো এ পর্যন্ত ৮৫,০০০-এর বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এবং প্রতি বছর ৮৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আয় অর্জন করছে। ২০২৫ সালের মধ্যে বাক্কো ১ লক্ষ টেকসই কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বার্ষিক আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে। তাই এবারের বিপিও সামিট বাক্কোর এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি”
বাক্কো সাধারণ সম্পাদক ফয়সল আলিম বলেন, “তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবা রপ্তানির মাধ্যমে দেশের রপ্তানি আয়কে ত্বরান্বিত করতে ফ্রিল্যান্সারদের অবদান অপরিসীম। সামিটে আয়োজিত সেমিনারের মাধ্যমে আমরা ফ্রিল্যান্সারদের সমস্যাগুলো শুনবো এবং সম্ভাব্য সমাধানগুলো নিয়ে সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করবে বাক্কো। আউটসোর্সিং শিল্পের একক সংগঠন হিসেবে বাক্কো ফ্রিল্যান্সার ফোরাম এখন থেকে ফ্রিল্যান্সারদের উন্নয়নে সরকারের সাথে কাজ করে যাবে”।
তথ্যপ্রযুক্তিখাত সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীগণের সরব উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনটি ছিল পরিপূর্ণ। বাক্কো কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে আরও উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি মোঃ তানজিরুল বাসার, অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আমিনুল হক; পরিচালক জনাব আবু দাউদ খান, আব্দুল কাদের, জায়েদ উদ্দীন আহমেদ, মেহেদী হাসান জুলফিকার, সায়মা শওকত এবং নির্বাহী পরিচালক লে: কর্নেল (অব:) মো: মাহতাবুল হক, পিএসসি। এছাড়া, বাক্কোর সম্মানিত সদস্যবৃন্দ, তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞগণ এবং তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এ আয়োজনকে সফল করতে বাক্কোর সহযোগী হিসেবে থাকছে বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ), টেকনোলজি মিডিয়া গিল্ড বাংলাদেশ (টিএমজিবি) এবং টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক (টিআরএনবি)।