দেশের তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের অন্যতম প্রধান সংগঠন বাংলাদেশ বাংলাদেশ সিস্টেম এডমিনিস্ট্রেটরস ফোরাম (বিডিসাফ) উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো দিনব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা বিষয়ক দিনব্যাপি সম্মেলন “সাইবার সিকিউরিটি সিম্পোজিয়াম ২০২৫”। শতাধিক তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশলীদের উপস্থিতিতে ২৫ অক্টোবর ২০২৫-এ রাজধানীর মহাখালীস্থ এডভান্সড নুরানি টাওয়ারের ১২তলায় সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান “ব্রেইন স্টেশন ২৩ (Brain Station 23)” এর অফিসে অনুষ্ঠিত এই সিম্পোজিয়ামে আলোচনায় আছে তথ্য প্রযুক্তির নিরাপত্তা এবং সাইবার সচেতনতা বিষয়ক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি।
বিডিসাফ কর্তৃক আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের মাননীয় সচিব জনাব জনাব শীষ হায়দার চৌধুরী, এনডিসি, MCIPS (CS)। তিনি বলেন তিনটি ভিন্ন ভিন্ন স্তরে জাতীয় পর্যায়ে চলছে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন। প্রাথমিক রেগুলেটরি স্তরে ডাটা সিকুরিটি, সাইবার সিকুরিটি আইনসহ প্রণয়নসহ ন্যাশনাল ডাটা গভর্নেন্স অথরিটি গঠন করছে সরকার। দ্বিতীয় স্তরে বহুমাত্রিক ব্যাকবোন তৈরি; যেখানে গুরুত্ব পাবে ইন্টার অপেরাবিলিটি এবং ইন্টিগ্রেশন। সর্বশেষ পর্যায়ে দেশিয় জনবল এর উপযুক্ত ব্যাবহার এর মাধ্যমে তৈরি হবে উন্নতমানের সফটওয়্যার ও ডেভেলপমেন্ট আবহ। তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন অদূর ভবিষ্যতেই ফ্রি-ল্যান্সারদের জন্য সময়োপযোগী নীতিমালা আসছে। মাননীয় সচিব আগামি দিনে বিডিসাফ এবং আইসিটি বিভাগের একসাথে কাজ করার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করছেন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মোঃ জোবায়ের আল মাহমুদ। জনাব জোবায়ের তথ্য-প্রযুক্তি খাতে সবার সাথে একসাথে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যাক্ত করেন। তিনি আরো বলেন চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য-প্রযুক্তিবিদদের সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ চালিয়ে যাবে বিডিসাফ। “Resilience through People, Technology & Trust” বা “মানুষ, প্রযুক্তি ও বিশ্বাসে গড়ে উঠুক সাইবার স্থিতিশীলতা” শীর্ষক এই সিম্পোজিয়ামে আছে দশটি টেকনিক্যাল সেশন, একটি প্যানেল ডিসকাশনসহ একধিক প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য।
“AI vs Fraud: Redefining Cyber Defense in Bangladesh’s Data Protection Era” বা “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রতারণার দ্বন্দ্ব: তথ্য সুরক্ষার যুগে বাংলাদেশের সাইবার প্রতিরক্ষা পুনর্নির্মাণ” বিষয়ক প্যানেল আলোচনায় করবেন এশিয়া-প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টার (এপনিক) এর এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল সদস্য এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ফাইবার–এট-হোম এর উপ-মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুমন আহমেদ সাবির, বরেণ্য তথ্য প্রযুক্তিবিদ এবং উদ্যোক্তা শায়েরুল হক জোয়ার্দার নীল, মুঠোফোন অপারেটর রবি-এর সহযোগী পরিচালক সঞ্জয় চক্রবর্তী এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার নাবিল আহমেদ খান। প্যানেল ডিসকাশন পরিচালনা করবেন বিডিসাফ-এর সাধারন সম্পাদক জনাব মোহিব্বুল মোক্তাদীর তানিম।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির এ যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) যেভাবে মানবজীবন ও কাজের ধারা আমূল পরিবর্তন করছে, তেমনি এটি সৃষ্টি করছে নতুন ধরনের প্রতারণা ও সাইবার হুমকির আশঙ্কা। বিশ্বব্যাপী AI ব্যবহারের পাশাপাশি ডিপফেক, ভুয়া পরিচয় এবং ডেটা লিক এখন আধুনিক সাইবার অপরাধের রূপ নিয়েছে।
তাদের মতে, বাংলাদেশের জন্য এখন সময় এসেছে সাইবার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন ও তথ্য সুরক্ষা নীতিমালা আরও শক্তিশালী করার। এজন্য প্রয়োজন —
🔹 AI-নির্ভর হুমকি শনাক্তকরণ ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা,
🔹 সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের মতামতের ভিত্তিতে তথ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও কার্যকর বাস্তবায়ন,
🔹 এবং নৈতিক ও স্বচ্ছ প্রযুক্তি ব্যবহারের নিশ্চয়তা।
বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই আর্থিক খাত, টেলিকম এবং সরকারি সেবায় AI ব্যবহারের সূচনা করেছে, যা সাইবার প্রতিরক্ষা জোরদার করার নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে। তবে, মানবিক দক্ষতা ও প্রযুক্তির সমন্বয় বজায় রাখা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। প্যানেলের আলোচনায় সবাই একমত হন যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হোক প্রতারণার নয়, প্রতিরক্ষার হাতিয়ার — এই ভাবনায় গড়ে উঠুক নিরাপদ ডিজিটাল বাংলাদেশ।
দিনব্যাপী টেকনিক্যাল সেশনগুলোতে পরিচালনা করছেন টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, সফটওয়্যার নির্মাতাসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞগন। টেকনিক্যাল সেশন নিচ্ছেন ইস্টার্ন ব্যাংকে পিএলসি-এর তথ্য নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, ইন্টারনেট সেবা প্রতিস্থান লিংক-থ্রি প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা রকিবুল হাসান, টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ফোনের হেড অফ সিকিউরিটি অপারেশন সেন্টার রাসকিন পাল, সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিস্থান ব্রেইন স্টেশন 23 এর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ পুলিশের এসপি খালেদা বেগম, বাংলা লিংকের আইটি নেটওয়ার্ক ও সিকিউরিটি অপারেশন প্রধান মেজর (অবঃ) এস এম আল মায়মুন, তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এস এম রুবায়েত ইসলাম, মুঠো ফোন প্রতিস্থান ররি-এর জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক সামিনুল ইসলাম তরফদার, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান টেক নোভেল্টি লিমিটেড এর এ কে এম নুরুল আলাম এবং ব্রেইন স্টেশন ২৩ এর সলিউশন আর্কিটেক্ট আনোয়ার হোসাইন।
সকালে জনাব রুবেয়াতের আলোচনায় ছিল সিকিউরিটি অপারেশন সেন্টার এর আধুনিকায়নের খুঁটিনাটি এবং এবং থ্রেট হান্টিং বিষয়ে বিশদ আলোচনা। অপর একটি টেকনিক্যাল সেশনে জনাব নুরুল আলম আলোচনা করেন তথ্যপ্রযুক্তি কাঠামো এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিকল্পনা এবং পরিচালনা নিয়ে। রবির সামিনুল ইসলাম আলোকপাত করেন ক্লাউড অবকাঠামোর অংশীদারি ব্যবহার এবং নিরাপত্তা সীমানা নির্মাণ ও পরিচালনা বিষয়ে।
সিম্পজিয়ামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ছিল সাইবার সিকিউরিটির ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নিয়ে। জনাব রাকিবুল ইসলামের আলোচনায় উঠে আসে কিভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমাত্রার প্রয়োগের মাধ্যমে একটি সাইবার সহনশীল প্রযুক্তি কাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব। একই সাথে তিনি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমাত্রা ভিত্তিক অটোমোশনের সম্ভাবনা নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং পরিকল্পনার কারিগরি দিকগুলোকে বিশদ আকারে তুলে আনেন। ব্রেইন স্টেশন ২৩ জনাব মিজানুর রহমান সফটওয়্যার নির্মাণের ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কিভাবে ব্যবহার করা যায় নিরাপদ ভাবে তার বিভিন্ন ধরনের টেকনিক্যাল প্রয়োগগুলো উদাহরণসহ উপস্থিত তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের সাথে আলোচনা করেন। একই প্রতিষ্ঠানে আরেকজন কর্মী সফটওয়্যার নির্মাণের ক্ষেত্রে যে সকল নিরাপত্তা বিষয়গুলোকে বিবেচনা করতে হয় সেগুলোর ক্ষেত্রে তো কিছুই বুদ্ধি মাত্রা প্রয়োজন কথা বলেন।
জনাব আবুল কালাম আজাদ তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক বিভিন্ন টুলস ইন্টিগ্রেশনের মাধ্যমে কিভাবে প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক, অ্যাপ্লিকেশন এবং সিস্টেম নিরাপদ করা যেতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করেন। মেজর (অবঃ) মায়মুনের আলোচনায় উঠে আসে আধুনিক জিরো ট্রাস্ট নেটওয়ার্ক ব্যবহারের বিভিন্ন দিক এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে জিরো ট্রাস্ট নেটওয়ার্কের প্রয়োজনীয়তা ও কৌশলগত বিষয়াদি।
শুধুমাত্র নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নির্মাণ এবং পরিচালনা নয়, সিপোজিয়ামের উন্নতম আলোচ্য বিষয় ছিল, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং এবং সাইবার আক্রমণের ক্ষেত্রে করনীয় বিষয়াদি। সাইবার আক্রমণ এবং র্যানসমওয়্যার ইন্সিডেন্ট পরবর্তী ঝুঁকি এবং তদন্তের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন গ্রামীনফোনের রাসকিন পাল। বাংলাদেশ পুলিশের এসপি খালেদা বেগম সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে ঘটে চলা বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও তার বিশ্লেষণ এবং প্রতিকার ও প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করেন। । তার আলোচনায় একই সাথে কারিগরি এবং আইনগত দিকগুলো উঠে আসে।
আমন্ত্রিত অতিথি, প্রতিযোগিতায় বিজয়ী এবং পৃষ্ঠপোষকদের হাতে স্মারক ক্রেস্ট তুলে দেয়ার মধ্যদিয়ে অনুস্থান শেষ হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন বিডিসাফ এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আশফাকুর রহমান। আয়োজনে ব্রেইন স্টেশন ২৩ (Brain Station 23)” এবং “লিডিং এজ টেকনোলজি”
