গার্মেন্ট মেশিনারি এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্য নিয়ে রাজধানীতে শুরু হচ্ছে চারদিনব্যাপী তৈরি পোশাক শিল্প পণ্যের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী “GTB 2024”। GAPExpo-এর সহযোগিতায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প খাতকে আরো প্রযুক্তিনির্ভর করতে প্রদর্শনীটিতে তুলে ধরা হবে গার্মেন্ট এক্সেসরিজ এবং প্যাকেজিং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্য। রাজধানীর আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) ১১ জানুয়ারি থেকে এই প্রদর্শনী শুরু হয়ে শেষ হবে ১৪ জানুয়ারি। দেশের আরএমজি খাতের সোর্সিং চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ গার্মেন্ট এক্সেসরিজ প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাথে যৌথভাবে একই ছাদের নিচে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গার্মেন্টস টেকনোলজি শো বাংলাদেশ (GTB 2024) – এর ২১তম এবং GAPExpo 2024 এর ১৩তম সংস্করণ । অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস-চেয়ারম্যান এ.এইচ.এম. আহসান, (অতিরিক্ত সচিব। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মোঃ আব্দুর রহিম খান, এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এবং বিকেএমইএের নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মো. মশিউর রহমান।
এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন আস্ক ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশনস প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিপু সুলতান ভূঁইয়া, পরিচালক সেলিম বাশা প্রমুখ। আটটি হল জুড়ে চার দিন চারদিনব্যাপী প্রদর্শনীটিতে অংশগ্রহণ করছে ২০টিরও বেশি দেশের ৩০০ প্রদর্শক। দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্য প্রদর্শনীর মধ্যে এটি অন্যতম। এতে বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি সুযোগ থাকছে বিশ্বের স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলার। গত ২০ বছর ধরে GTB তৈরি পোশাক খাতের বৈশ্বিক প্রযুক্তিগুলোকে এক ছাদের নিচে নিয়ে আসছে। এই প্রদর্শনীগুলোয় আরএমজি সেক্টরের কাটিং, সেলাই, ফিনিশিং, এমব্রয়ডারি মেশিনারিসহ বিভিন্ন ধরনের আনুষঙ্গিক পণ্য এক সাথে দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। এবারের প্রদর্শনীতেও দেশ-বিদেশের আধুনিক প্রযুক্তিগুলো প্রদর্শন করা হবে। আস্ক ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশনস প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিপু সুলতান ভূঁইয়া জানান, তৈরি পোশাক সরবরাহকারী হিসেবে বিশ্ববাজারে অন্যতম শীর্ষ অবস্থান সুসংহত করেছে বাংলাদেশ। এই অবস্থানকে সুসংহত করতে এবং বৈশ্বিক বাজারের চাহিদা মেটাতে আরএমজি খাত আধুনিকীকরণের একটি প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে GTB 2024। তিনি বলেন, “চাহিদার ওঠানামা, ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা, মুদ্রার বিনিময় হারে অস্থিতিশীলতাসহ আরো বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে আরএমজি খাত। এ থেকে উত্তরণের জন্য আরো মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে, যাতে পণ্যে বৈচিত্র্য আনা যায় এবং রপ্তানির নতুন বাজারে প্রবেশের সুযোগ উন্মোচিত হয়। গার্মেন্ট টেকনোলজি বাংলাদেশ ২০২৪ (GTB 2024)-এর প্রদর্শনীতে এই খাতের আধুনিকীকরণ ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগুলো দেখানো হবে।“
“GAPEXPO 2024”- হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এবং প্যাকেজিং প্রদর্শনী। এতে তৈরি পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল প্রদর্শন করা হবে। বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (BGAPMEA) দেশের প্রায় ১৮০০’র বেশি গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ এবং প্যাকেজিং ফামের্র প্রতিনিধিত্ব করে। গার্মেন্টসের আনুষঙ্গিক পণ্য এবং প্যাকেজিং আরএমজি খাতের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প হিসেবে কাজ করছে। এই খাতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ৫ লাখের বেশি মানুষ। বাংলাদেশ একটি বিশ্বস্ত সোর্সিং হাব গত এক দশকে বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির রূপান্তরে তৈরি পোশাক শিল্প (আরএমজি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮১ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি আসছে এই খাত থেকে। বৈশ্বিক মান নিশ্চিতের পাশাপাশি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর মাধ্যমে ২০২১ সালে আরএমজি রপ্তানির পরিমাণ ৩৫ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে। এ পথ পরিক্রমায় বাংলাদেশে স্থাপন করা হয়েছে বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক সবুজ কারখানা। এসব কারখানায় ব্যাবহার হচ্ছে পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি যা পানি, বিদ্যুতের ব্যাবহার কমানো পাশাপাশি দূষণ হ্রাস করে।
আরো শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির পথে ম্যাকেঞ্জির ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গত এক দশকে বাংলাদেশের আরএমজি সেক্টর প্রবৃদ্ধির নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অকল্পনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে- বিশেষ করে গ্রাহক ও পণ্যে বৈচিত্র্য আনয়ণ, সরবরাহকারী ও জনবলের কর্মদক্ষতা উন্নয়ন এবং কমপ্লায়েন্স এবং টেকসইপ্রবৃদ্ধি নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে। বিভিন্ন ঋতুর সাথে মিল রেখে সকল বয়সের মানুষের চাহিদা পূরণে বিশ্বের ১৫০টির বেশি দেশে "মেইড ইন বাংলাদেশ ট্যাগ সহ তৈরি পোশাক রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। পোশাক তৈরিতে ৩৫ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা, এবং ৪ হাজারের বেশি কারখানা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের সকল ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোকে তৈরি পোশাক সরবরাহ করছে। এই সকল কারখানা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা এবং কমপ্লায়েন্স বজায় রেখে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পাশাপাশি তাদের মূল্যায়ন করছে BSCI, WRAP, SMETA, ICS, Higg index, GTW, RTM, Join Life, ZDHC, Blue Sign, ISO, OCS, GOTS, Oekotex মত প্রতিষ্ঠান। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন,” আমরা উদ্ভাবন, আধুনিকীকরণ, বৈচিত্র্যকরণ, প্রযুক্তির উন্নয়ন, এবং আমাদের কর্মশক্তিকে উন্নত এবং পুনঃ-দক্ষ করার মাধ্যমে আমাদের ব্যবসাকে শ্রম নির্ভর থেকে মূল্য সংযোজনে পুনর্নির্মাণের দিকে মনোনিবেশ করছি। বিশ্বব্যাপী ৭ শতাংশের কম মার্কেট শেয়ার এখন আমাদের দখলে রয়েছে, যার ফলে আগামী দিনে রয়েছে আমাদের অপার সম্ভাবনা।“